প্রায় ৫০শতাংশ লোকের মনে এরকম একটা প্রশ্ন থাকে তা হল ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক কেমন হয়? আপনি অনুমান করতে পারবেন না যে, গত কয়েক বছর ধরে পুরো পৃথিবীতে ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইকের ডিমান্ড কি রকম হয়েছে। নতুন নতুন মডেল বাজারে আসছে আবার সেগুলো বিক্রি ও হচ্ছে। ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক ইতিমধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে চায়না এবং জাপানে সাথে সাথে ইউরোপ জুড়ে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাচ্ছে।
ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক প্রতিদিনের যাতায়াতের সঙ্গী হিসেবে জনপ্রিয়। আপনারা অনেকেই ই-বাইক গুলো দেখেছেন কিংবা দেখেন নি। ই -বাইক গুলো দেখতে রেগুলার যে সাইকেল গুলো দেখা যায় সেগুলোর মতই তবে এগুলোর কোনো শব্দ উৎপন্ন হয় না এবং কার্বন নিঃসরণ হয় না। চলাচল করতে অসুবিধা হয় না ,খুব সহজভাবে এবং মজা নিয়ে যাতায়াত উপভোগ করা যায়। আজকের আর্টিকেল সাজানো হয়েছে ইলেকট্রিক স্কুটার নাকি ইলেকট্রিক বাইক কোনটি কিনবেন এ প্রসঙ্গে। এ আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন কোনটি আপনার জন্য সুবিধাজনক। চলুন তাহলে দেখে নেই ইলেকট্রিক স্কুটার নাকি ইলেকট্রিক বাইক কোনটি কিনবেন?
দামঃ
প্রথমেই আসি ইলেকট্রিক বাইকের প্রসঙ্গে। প্রথমত বাজারে ইলেকট্রিক বাইক গুলোর দাম ইলেকট্রিক স্কুটারের চেয়ে একটু বেশি। ই -বাইক গুলোর দাম ১০০০ ডলার থেকে শুরু করে ৪০০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে ই- স্কুটার গুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। তবে কিছুদিনের মধ্যেই ই- বাইক গুলোর দাম অনেক কমে যাবে প্রায় ১৫০০ ডলারের কাছাকাছি থাকবে।
সর্বোচ্চ গতিঃ
যেহেতু দুটোই পাওয়ারফুল ব্যাটারিচালিত তাই ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইকের গতি নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। ইলেকট্রিক বাইক গুলোর সর্বোচ্চ গতি ২০ এমপিএইচ। অন্যদিকে ইলেকট্রিক স্কুটারের সর্বোচ্চ গতি ১৫ এমপিএইচ পর্যন্ত।
পরিবেশ বান্ধবঃ
ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক দুটোই পরিবেশ বান্ধব। সারাবিশ্বে কার্বন নিঃসরণ খুব সাংঘাতিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তাই কিছু কিছু দেশ পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহার করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে। এদিক থেকে ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক পরিবেশের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এগুলো কার্বন নিঃসরণ করে না তাই আপনি ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারবেন।
সুরক্ষাঃ
প্রথমে বলে রাখি আপনি যে যানবাহনগুলোই ব্যবহার করেন না কেন নিজের সুরক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ইলেকট্রিক স্কুটার ব্যবহার করার সময় হেলমেট পরিধান করা উচিত। অন্যদিকে ইলেকট্রিক বাইক যেহেতু রেগুলার সাইকেলের মতো ব্যবহার করা যায় তাই হেলমেট পরিধান না করলে তেমন সমস্যা হয় না।
স্টোরেজ সুবিধাঃ
ইলেকট্রিক স্কুটার আকারে ছোট হওয়ায় একে স্টোরিজ করার বেশ সুবিধা আছে। অন্যদিকে ইলেকট্রিক বাইক গুলো রেগুলার সাইকেলের মতো বড় হওয়ায় এগুলো ষ্টোরেজ করতে একটু অসুবিধা হয়। ইলেকট্রিক স্কুটারগুলো ভাঁজ করে ঘরে কিংবা গ্যারেজে গাড়ির পিছনে রাখা যায়। কিছু কিছু ইলেকট্রিক বাইকের ও ভাঁজ করার অপশন আছে তাই কেনার সময় কি কি ফিচার আছে সেগুলো জেনে কেনা উচিত।
চুরি যাবার সম্ভাবনাঃ
ইলেকট্রিক স্কুটার গুলো বেশি হালকা হাওয়ায় চুরি যাবার সম্ভাবনা বেশি। যদি ইলেকট্রিক স্কুটারে এবং ইলেকট্রিক বাইকে এলার্ম দেয়া না থাকে তাহলে দুটোরই চুরি হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক ব্যবহারে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
শব্দঃ
ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক দুটো থেকেই শব্দ উৎপন্ন হয় না। তাই ইলেকট্রিক স্কুটার কিংবা ইলেকট্রিক বাইক যেটাই কিনুন না কেন শব্দ দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। তাই এগুলোকে বলা যায় শব্দ দূষণ মুক্ত বাহন।
চাকার সাইজঃ
ইলেকট্রিক বাইক গুলো চাকার সাইজ অনেক বড় হয় সাধারণত ১৬ ইঞ্চির মত আবার অন্যদিকে ইলেকট্রিক স্কুটার এর চাকার সাইজ ছোট হয় সর্বোচ্চ ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত। তবে ইলেকট্রিক বাইক গুলো যেকোনো ধরনের রাস্তায় চলতে পারে।
শরীরকে ফিট রাখতেঃ
আপনি যদি শরীরকে ফিট রাখতে চান তাহলে ইলেকট্রিক বাইক চালানো সেদিক দিয়ে বেশ ভালো একটা ব্যায়াম হতে পারে। কারণ ইলেকট্রিক বাইক গুলোতে প্যাডেল থাকে, প্যাডেল চালাতে বেশ পরিশ্রম হয়। অন্যদিকে ইলেকট্রিক স্কুটার চালাতে তেমন পরিশ্রম হয় না। অবশ্যই পুরো পছন্দ আপনার, আপনি কোনটি পছন্দ করবেন। যদি আপনি ব্যায়াম করতে পছন্দ করেন তাহলে ইলেকট্রিক বাইক আপনার জন্য ভালো আর যদি ব্যায়াম করতে পছন্দ না করেন তাহলে ইলেকট্রিক স্কুটার ভালো হবে।
ব্যাটারি পাওয়ারঃ
ইলেকট্রিক স্কুটার গুলো ব্যাটারি দিয়ে চলে তাই ব্যাটারির পাওয়ার যত ভালো হবে ইলেকট্রিক স্কুটার ততো ভালো চলবে তবে এক্ষেত্রে রাস্তার অবস্থা ও ভালো হতে হবে। অন্যদিকে ইলেকট্রিক বাইক গুলোর ব্যাটারির চার্জ শেষ হলেও প্যাডেল দিয়ে বেশ ভালো ভাবে চালানো যায় সাধারণ সাইকেলের মতো।
জনপ্রিয়তাঃ
ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক এর জনপ্রিয়তা একেক দেশে একেক রকম আছে। ইলেকট্রিক বাইক এর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি চীন এবং জাপানে। অন্যদিকে ইউরোপ ইউরোপের দেশগুলোতে আবার ইলেকট্রিক স্কুটারের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।
সবশেষে, ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় বাহিরের দেশে। এগুলো আমাদের দেশে সেরকম ভাবে এখনও জায়গা করে নিতে পারেনি অনেকে আবার এগুলো দেখেও নি।তবে ইন্টারনেটের বদৌলতে এখন অনেকেই এগুলো কেনার জন্য বেশ উৎসাহী তাই যারা এগুলো সম্পর্কে জানতে চান এবং কিনতে আগ্রহী তাদের জন্য আজকের আর্টিকেল। আসলেই ইলেকট্রিক স্কুটার এবং ইলেকট্রিক বাইক দুটোরেই আলাদা আলাদা সুবিধা আছে। যারা দাঁড়িয়ে চালাতে চান তাদের জন্য ইলেকট্রিক স্কুটার সেরা আবার যারা বসে চালাতে চান তাদের জন্য ইলেকট্রিক বাইক সেরা। তবে অল্প দূরত্বে যাওয়া আসার জন্য ইলেকট্রিক স্কুটার সুবিধাজনক এমনি একটু বেশি হলে ইলেকট্রিক বাইক সুবিধাজনক। তাই নিজের সুবিধার কথা চিন্তা করে এবং বাজেটের বিষয়টা মাথায় রেখে কিনতে পারেন যেকোনো একটি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি ইলেকট্রিক স্কুটার কে পছন্দ করি কারণ এগুলো চালানো শিখতে বেশি সময় লাগে ন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শিখে নেয়া যায় অন্যদিকে ইলেকট্রিক বাইক চালানো শিখতে সময় লাগে। যাই হোক পছন্দ পুরোপুরি আপনার।